, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড় গোলাপগঞ্জে বিএমএসএফ এর কমিটি গঠন, সভাপতি বদরুল আলম, সম্পাদক শাহ আলম এবার শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ। শহীদুল আলমদের বহনকারী জাহাজ আ’টকের তথ্য জানাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা সাংবাদিক ইলিয়াস : এনসিপি বলে এদেশে কিছু থাকবে না নিজেদের নির্দেশনা মানছে সরকার? উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টার বহর নিয়ে যত সমালোচনা। মৃত্যুর দুইদিন পার, দাফন নিয়ে সরকার-পরিবারের দ্বন্দ্বে হাসপাতালেই তোফায়েল আহমেদের মরদেহ। খুলনায় ঘুমন্ত যুবককে গু’লি করে হ’ত্যা। ৫ আগস্ট হাসিনার কয়েক হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলে এনটিএমসি।
নোটিশ :
মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড় গোলাপগঞ্জে বিএমএসএফ এর কমিটি গঠন, সভাপতি বদরুল আলম, সম্পাদক শাহ আলম এবার শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ। শহীদুল আলমদের বহনকারী জাহাজ আ’টকের তথ্য জানাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা সাংবাদিক ইলিয়াস : এনসিপি বলে এদেশে কিছু থাকবে না নিজেদের নির্দেশনা মানছে সরকার? উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টার বহর নিয়ে যত সমালোচনা। মৃত্যুর দুইদিন পার, দাফন নিয়ে সরকার-পরিবারের দ্বন্দ্বে হাসপাতালেই তোফায়েল আহমেদের মরদেহ। খুলনায় ঘুমন্ত যুবককে গু’লি করে হ’ত্যা। ৫ আগস্ট হাসিনার কয়েক হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলে এনটিএমসি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুকে ঘিরে ‘রহস্য’শেষ পর্যন্ত থেকেই গেল

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৫৮৬ Time View

প্রকাশ: শামীমা নাসরীন

তারিখ: ২৭ -১২ -২০২৪ খ্রীঃ

দেখতে দেখতে আরেকটি বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন, মূল্যস্ফীতি আর যুদ্ধের বছর ছিল ২০২৪। এ বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া বিশেষ বিশেষ ঘটনা নিয়ে পাঠকদের জন্য আমাদের বিশেষ আয়োজন।

তিনি ছিলেন কট্টরপন্থী ও রক্ষণশীল। ইরানের রাজনীতিতে ছিল তাঁর দুর্দান্ত প্রভাব। তাঁকে ভাবা হচ্ছিল দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি।

নিজের কঠোর ও অনড় মনোভাবে কারণে ইরানের ক্ষমতার বলয়ে ইব্রাহিম রাইসি হয়ে উঠেছিলেন ভীষণ আস্থার এক নাম। কিন্তু একই স্বভাবের কারণে তিনি দেশটির জনগণের কাছে নিদারুণ অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর প্রতি মানুষের অনাস্থা এতটাই বেড়েছিল যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে রাইসির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইরানের কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

চলতি বছরের ১৯ মে ইরানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ইব্রাহিম রাইসি, তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। রকেট গতিতে যিনি ইরানের ক্ষমতার চূড়ার দিকে ছুটে চলছিলেন, হঠাৎ করে একদিন তিনি যেন নাই হয়ে গেলেন।

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়া নিছক দুর্ঘটনা ছিল, নাকি গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তিনি, সে রহস্য আজও অজানা। রাইসির মৃত্যু ঘিরে কয়েকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শোনা গিয়েছিল। যদিও পরদিন ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো খুব সরল ভাষায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছিল।

ওই দিন যা ঘটেছিল

‘ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টার নিখোঁজ’—১৯ মে সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল ইরানের দিকে। হেলিকপ্টারটি যেখান থেকে নিখোঁজ হয়, সেটি ছিল দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। কয়েক ঘণ্টার অনুসন্ধানের পর জানা যায়, রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পরদিন রাইসি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়।

সেদিন আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টার বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা।

পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টার। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়। সেদিন বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারে রাইসি, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি এবং ওই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন।

১৯ মে প্রাথমিকভাবে হেলিকপ্টারে ৯জন আরোহী থাকার কথা জানানো হয়। কিন্তু উদ্ধার হয় আটটি মৃতদেহ। হেলিকপ্টার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ইরানের আধা–সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এবং তিনি শহীদ হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়। বাকি সংবাদমাধ্যমগুলোও একই ধরনের খবর প্রকাশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের এই হেলিকপ্টারে করে শেষেবার ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের এই হেলিকপ্টারে করে শেষেবার ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসিফাইল ছবি: রয়টার্স
‘আমি জানতাম, আমার ছেলে আর ফিরবে না’

ইরানের প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের প্রধান ছিলেন মেহেদি মুসাভি। তিনি ইব্রাহিম রাইসির নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন এবং ১৯ মে তাঁর সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মুসাভিও মারা গেছেন জানার পর তাঁর বাবা ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছিলেন, তিনি জানতেন তাঁর ছেলে ওই সফর থেকে আর ফিরে আসবেন না।

কেন মেহেদি মুসাভির বাবার এমন মনে হয়েছিল, সে ব্যাখ্যাও টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই দেন মুসাভির বাবা। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই সফরে যাওয়ার আগের রাতে তিনি (মেহেদি মুসাভি) আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠে আবার নেমে আমাদের কাছে আসেন। আমাদের সঙ্গে আরও ২০ মিনিট কাটান তিনি। তারপর চলে যান। গাড়িতে কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে আসেন এবং আরও ১০ মিনিট আমাদের কাছে থাকেন।’

তৃতীয়বার বিদায় নেওয়ার সময় মুসাভি তাঁর বাবা ও মায়ের পায়ে চুমু খান বলেও জানান তাঁর বাবা।

ছেলের এই আচরণ বাবার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার তখনই মনে হয়েছিল, সে আর ফিরে আসবে না। আমি জানতাম, আমাদের আর কখনো দেখা হবে না।’

দ্বিতীয় নিরাপত্তারক্ষী রহস্য

মেহেদি মুসাভির সঙ্গে সেদিন রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারে আরেকজন প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের থাকার কথা ছিল। প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের ওই সদস্যের নাম জাভেদ মেহরাবল। তাঁকে ধরেই বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ৯ আরোহী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু মেহরাবলের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি, যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়।

ওই রহস্যের জাল আরও গাঢ় হয়, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার চার দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টকে ঘিরে। ওই পোস্টে রাইসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পেছন দিকের এক কোনায় মেহরাবলকে অস্বস্তি নিয়ে ঝুঁকে থাকতে দেখা যায়।

পরে প্রেস অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে মেহরাবলের একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে মেহরাবল বলেন, একেবারে শেষ মিনিটে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মেহেদি মুসাভি তাঁকে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারে না উঠে বহরে থাকা অন্য দুই হেলিকপ্টারের যেকোনো একটিতে উঠে যেতে বলেন।

আরও পড়ুন
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের নেপথ্য কারণ কী
২১ মে ২০২৪
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের নেপথ্য কারণ কী
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্য কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছে
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্য কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছেফাইল ছবি: এএফপি
শেষের কয়েক মুহূর্ত নিয়ে সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য

১৯ মে রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আগের কয়েক মুহূর্তে কী ঘটেছিল, সেই সময়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন রাইসির চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। তিনি সেদিন প্রেসিডেন্ট বহরে ছিলেন। তবে অন্য একটি হেলিকপ্টারে। রাইসির হেলিকপ্টারের পাইলট পুরো বহরের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বাঁধ উদ্বোধন শেষে রাইসিরা যখন ফিরছিলেন, তখন আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিক ছিল।

ইসমাইলি বলেছিলেন, যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ওড়ার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। প্রায় আধা মিনিট পর মেঘের ওপর অন্য দুই হেলিকপ্টার দেখা গেলেও রাইসির হেলিকপ্টার আর দেখা যায়নি। প্রথমে পাইলটরা নিজেদের মধ্যে এবং পরে কর্মকর্তারা নিখোঁজ হেলিকপ্টারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

তবে শেষ পর্যন্ত অন্য দুই হেলিকপ্টারের আরোহীরা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এবং তিনিই জানান, তাঁদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ইসমাইলি বলেছেন, তাঁরা আরও একবার আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আল-হাশেমকেও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল, জানালেন অন্য হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা
২২ মে ২০২৪
শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল, জানালেন অন্য হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া যত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে এ খবর জানার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় এ খবর সত্য নাকি মিথ্যা, এর পেছনে কার হাত আছে, তা নিয়ে অনলাইনে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ২২ শতাংশ এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর ভুয়া কিনা, তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। সে সময় আরও কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল।

তেল আবিব ভিত্তিক সাইবার-নিরাপত্তা কোম্পানি সায়াব্রা বলেছিল, তারা সে সময়ে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট ‘এলি চপটার’ রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে আছেন। হিব্রু ভাষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি কৌতুক থেকে ওই নামটি নেওয়া হয়। যদিও গত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাকে খুন করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল রাইসির হত্যাকাণ্ডে তাদের কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।

তথ্যসূত্র

টাইমস ম্যাগাজিন, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা

মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুকে ঘিরে ‘রহস্য’শেষ পর্যন্ত থেকেই গেল

Update Time : ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রকাশ: শামীমা নাসরীন

তারিখ: ২৭ -১২ -২০২৪ খ্রীঃ

দেখতে দেখতে আরেকটি বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন, মূল্যস্ফীতি আর যুদ্ধের বছর ছিল ২০২৪। এ বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া বিশেষ বিশেষ ঘটনা নিয়ে পাঠকদের জন্য আমাদের বিশেষ আয়োজন।

তিনি ছিলেন কট্টরপন্থী ও রক্ষণশীল। ইরানের রাজনীতিতে ছিল তাঁর দুর্দান্ত প্রভাব। তাঁকে ভাবা হচ্ছিল দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি।

নিজের কঠোর ও অনড় মনোভাবে কারণে ইরানের ক্ষমতার বলয়ে ইব্রাহিম রাইসি হয়ে উঠেছিলেন ভীষণ আস্থার এক নাম। কিন্তু একই স্বভাবের কারণে তিনি দেশটির জনগণের কাছে নিদারুণ অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর প্রতি মানুষের অনাস্থা এতটাই বেড়েছিল যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে রাইসির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইরানের কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

চলতি বছরের ১৯ মে ইরানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ইব্রাহিম রাইসি, তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। রকেট গতিতে যিনি ইরানের ক্ষমতার চূড়ার দিকে ছুটে চলছিলেন, হঠাৎ করে একদিন তিনি যেন নাই হয়ে গেলেন।

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়া নিছক দুর্ঘটনা ছিল, নাকি গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তিনি, সে রহস্য আজও অজানা। রাইসির মৃত্যু ঘিরে কয়েকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শোনা গিয়েছিল। যদিও পরদিন ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো খুব সরল ভাষায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছিল।

ওই দিন যা ঘটেছিল

‘ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টার নিখোঁজ’—১৯ মে সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল ইরানের দিকে। হেলিকপ্টারটি যেখান থেকে নিখোঁজ হয়, সেটি ছিল দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। কয়েক ঘণ্টার অনুসন্ধানের পর জানা যায়, রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পরদিন রাইসি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়।

সেদিন আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টার বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা।

পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টার। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়। সেদিন বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারে রাইসি, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি এবং ওই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন।

১৯ মে প্রাথমিকভাবে হেলিকপ্টারে ৯জন আরোহী থাকার কথা জানানো হয়। কিন্তু উদ্ধার হয় আটটি মৃতদেহ। হেলিকপ্টার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ইরানের আধা–সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এবং তিনি শহীদ হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়। বাকি সংবাদমাধ্যমগুলোও একই ধরনের খবর প্রকাশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের এই হেলিকপ্টারে করে শেষেবার ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের এই হেলিকপ্টারে করে শেষেবার ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসিফাইল ছবি: রয়টার্স
‘আমি জানতাম, আমার ছেলে আর ফিরবে না’

ইরানের প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের প্রধান ছিলেন মেহেদি মুসাভি। তিনি ইব্রাহিম রাইসির নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন এবং ১৯ মে তাঁর সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মুসাভিও মারা গেছেন জানার পর তাঁর বাবা ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছিলেন, তিনি জানতেন তাঁর ছেলে ওই সফর থেকে আর ফিরে আসবেন না।

কেন মেহেদি মুসাভির বাবার এমন মনে হয়েছিল, সে ব্যাখ্যাও টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই দেন মুসাভির বাবা। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই সফরে যাওয়ার আগের রাতে তিনি (মেহেদি মুসাভি) আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠে আবার নেমে আমাদের কাছে আসেন। আমাদের সঙ্গে আরও ২০ মিনিট কাটান তিনি। তারপর চলে যান। গাড়িতে কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে আসেন এবং আরও ১০ মিনিট আমাদের কাছে থাকেন।’

তৃতীয়বার বিদায় নেওয়ার সময় মুসাভি তাঁর বাবা ও মায়ের পায়ে চুমু খান বলেও জানান তাঁর বাবা।

ছেলের এই আচরণ বাবার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার তখনই মনে হয়েছিল, সে আর ফিরে আসবে না। আমি জানতাম, আমাদের আর কখনো দেখা হবে না।’

দ্বিতীয় নিরাপত্তারক্ষী রহস্য

মেহেদি মুসাভির সঙ্গে সেদিন রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারে আরেকজন প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের থাকার কথা ছিল। প্রেসিডেন্টশিয়াল গার্ডের ওই সদস্যের নাম জাভেদ মেহরাবল। তাঁকে ধরেই বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ৯ আরোহী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু মেহরাবলের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি, যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়।

ওই রহস্যের জাল আরও গাঢ় হয়, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার চার দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টকে ঘিরে। ওই পোস্টে রাইসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পেছন দিকের এক কোনায় মেহরাবলকে অস্বস্তি নিয়ে ঝুঁকে থাকতে দেখা যায়।

পরে প্রেস অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে মেহরাবলের একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে মেহরাবল বলেন, একেবারে শেষ মিনিটে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মেহেদি মুসাভি তাঁকে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারে না উঠে বহরে থাকা অন্য দুই হেলিকপ্টারের যেকোনো একটিতে উঠে যেতে বলেন।

আরও পড়ুন
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের নেপথ্য কারণ কী
২১ মে ২০২৪
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের নেপথ্য কারণ কী
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্য কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছে
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্য কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছেফাইল ছবি: এএফপি
শেষের কয়েক মুহূর্ত নিয়ে সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য

১৯ মে রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আগের কয়েক মুহূর্তে কী ঘটেছিল, সেই সময়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন রাইসির চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। তিনি সেদিন প্রেসিডেন্ট বহরে ছিলেন। তবে অন্য একটি হেলিকপ্টারে। রাইসির হেলিকপ্টারের পাইলট পুরো বহরের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বাঁধ উদ্বোধন শেষে রাইসিরা যখন ফিরছিলেন, তখন আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিক ছিল।

ইসমাইলি বলেছিলেন, যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ওড়ার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। প্রায় আধা মিনিট পর মেঘের ওপর অন্য দুই হেলিকপ্টার দেখা গেলেও রাইসির হেলিকপ্টার আর দেখা যায়নি। প্রথমে পাইলটরা নিজেদের মধ্যে এবং পরে কর্মকর্তারা নিখোঁজ হেলিকপ্টারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

তবে শেষ পর্যন্ত অন্য দুই হেলিকপ্টারের আরোহীরা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এবং তিনিই জানান, তাঁদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ইসমাইলি বলেছেন, তাঁরা আরও একবার আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আল-হাশেমকেও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল, জানালেন অন্য হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা
২২ মে ২০২৪
শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল, জানালেন অন্য হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া যত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে এ খবর জানার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় এ খবর সত্য নাকি মিথ্যা, এর পেছনে কার হাত আছে, তা নিয়ে অনলাইনে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ২২ শতাংশ এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর ভুয়া কিনা, তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। সে সময় আরও কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল।

তেল আবিব ভিত্তিক সাইবার-নিরাপত্তা কোম্পানি সায়াব্রা বলেছিল, তারা সে সময়ে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট ‘এলি চপটার’ রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে আছেন। হিব্রু ভাষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি কৌতুক থেকে ওই নামটি নেওয়া হয়। যদিও গত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাকে খুন করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল রাইসির হত্যাকাণ্ডে তাদের কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।

তথ্যসূত্র

টাইমস ম্যাগাজিন, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা