, বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিল সই করতে ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও তিন মাস সময় বেঁধে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৪০০ Time View


অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
বিল সই করার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও সময় বেঁধে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া কোনো বিল বিবেচনার জন্য রাজ্যপাল যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান, তা হলে রাষ্ট্রপতি তা অনির্দিষ্টকাল ফেলে রাখতে পারবেন না। তিন মাসের মধ্যে তাঁকে বিলে সম্মতি বা অসম্মতি দিতে হবে। কোনো কারণে সম্মতি দিতে দেরি হলে তার কারণ জানাতে হবে। রাজ্য সরকারকে সেই কারণ জানাতে রাষ্ট্রপতি ভবন বাধ্য থাকবে।

তিন মাস সময়সীমার মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিল–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না নিলে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে। নজিরবিহীন রায়ে বলা হয়েছে, অনির্দিষ্টকাল ধরে সিদ্ধান্ত না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ‘পূর্ণাঙ্গ ভেটো’ প্রয়োগ করতে পারেন না।

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল মামলার যে রায় গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছেন, সেই রায়ে রাজ্যপালের মতো রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবন তাঁদের রায়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এন রবির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। রাজ্যপাল রবির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২৩ সালে বিধানসভায় পাস হওয়া ১০টি বিলে সই না করে রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন। রাজ্যপালের ওই আচরণ ‘বেআইনি’। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেছিলেন, ‘কোনো সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কাজ না করলে আদালত হস্তক্ষেপে বিরত থাকবে না।’ সেই রায়েই রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতীয় সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদে বিলে সই করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির জন্য কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তিনটি কাজ করতে পারেন। বিলে সম্মতি দিতে পারেন, বিলটি নাকচ করে দিতে পারেন অথবা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশসহ ফেরত পাঠাতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথম সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বললেন, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই অনির্দিষ্টকাল সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকতে পারেন না। তামিলনাড়ু মামলায় দেখা গেছে, রাজ্যপাল রবি বিলে সম্মতি না দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই সিদ্ধান্ত না নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন না।

বিচারপতি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মহাদেবন তাঁদের রায়ে বলেছেন, সই করার আগে যেকোনো বিল সঠিকভাবে ‘বিবেচনা’ করা অবশ্যকর্তব্য। সেই বিবেচনা কঠোর সময়সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলা কঠিন। সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রপতির সময় লাগতেই পারে। আদালতও তা জানেন। কিন্তু তা ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অজুহাত হতে পারে না। কোনো যুক্তি ও ব্যাখ্যা ছাড়া বিলের সম্মতিতে বিলম্ব করা সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘন করে। তা ছাড়া ওই বিলম্ব যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেও ক্ষতিকর। রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি অকারণ বিলম্ব করতে পারেন না। তাঁরাও গোটা ব্যবস্থার অংশ।

ওই ১০টি বিলই দ্বিতীয়বার বিবেচনা করে রাজ্যপালের কাছে তামিলনাড়ু সরকার পাঠিয়েছিল। রাজ্যপাল তা পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। তা সত্ত্বেও সম্মতি না মেলায় রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিলেন, পুনর্বিবেচনার পরেও বিলে সম্মতি না আসায় ধরে নিতে হবে বিলগুলো সম্মতি পেয়েছে। এই মন্তব্যের পর বিনা সম্মতিতেই ওই ১০টি বিল তামিলনাড়ুতে আইনে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, এই রায় ঐতিহাসিক। ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য এ এক বিরাট জয়।

১২/৪/২০২৫//সুরমা টিভি /শামীমা

বিল সই করতে ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও তিন মাস সময় বেঁধে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট

Update Time : ০১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫


অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
বিল সই করার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও সময় বেঁধে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া কোনো বিল বিবেচনার জন্য রাজ্যপাল যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান, তা হলে রাষ্ট্রপতি তা অনির্দিষ্টকাল ফেলে রাখতে পারবেন না। তিন মাসের মধ্যে তাঁকে বিলে সম্মতি বা অসম্মতি দিতে হবে। কোনো কারণে সম্মতি দিতে দেরি হলে তার কারণ জানাতে হবে। রাজ্য সরকারকে সেই কারণ জানাতে রাষ্ট্রপতি ভবন বাধ্য থাকবে।

তিন মাস সময়সীমার মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিল–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না নিলে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে। নজিরবিহীন রায়ে বলা হয়েছে, অনির্দিষ্টকাল ধরে সিদ্ধান্ত না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ‘পূর্ণাঙ্গ ভেটো’ প্রয়োগ করতে পারেন না।

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল মামলার যে রায় গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছেন, সেই রায়ে রাজ্যপালের মতো রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবন তাঁদের রায়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এন রবির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। রাজ্যপাল রবির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২৩ সালে বিধানসভায় পাস হওয়া ১০টি বিলে সই না করে রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন। রাজ্যপালের ওই আচরণ ‘বেআইনি’। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেছিলেন, ‘কোনো সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কাজ না করলে আদালত হস্তক্ষেপে বিরত থাকবে না।’ সেই রায়েই রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতীয় সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদে বিলে সই করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির জন্য কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তিনটি কাজ করতে পারেন। বিলে সম্মতি দিতে পারেন, বিলটি নাকচ করে দিতে পারেন অথবা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশসহ ফেরত পাঠাতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথম সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বললেন, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই অনির্দিষ্টকাল সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকতে পারেন না। তামিলনাড়ু মামলায় দেখা গেছে, রাজ্যপাল রবি বিলে সম্মতি না দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই সিদ্ধান্ত না নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন না।

বিচারপতি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মহাদেবন তাঁদের রায়ে বলেছেন, সই করার আগে যেকোনো বিল সঠিকভাবে ‘বিবেচনা’ করা অবশ্যকর্তব্য। সেই বিবেচনা কঠোর সময়সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলা কঠিন। সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রপতির সময় লাগতেই পারে। আদালতও তা জানেন। কিন্তু তা ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অজুহাত হতে পারে না। কোনো যুক্তি ও ব্যাখ্যা ছাড়া বিলের সম্মতিতে বিলম্ব করা সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘন করে। তা ছাড়া ওই বিলম্ব যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেও ক্ষতিকর। রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি অকারণ বিলম্ব করতে পারেন না। তাঁরাও গোটা ব্যবস্থার অংশ।

ওই ১০টি বিলই দ্বিতীয়বার বিবেচনা করে রাজ্যপালের কাছে তামিলনাড়ু সরকার পাঠিয়েছিল। রাজ্যপাল তা পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। তা সত্ত্বেও সম্মতি না মেলায় রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিলেন, পুনর্বিবেচনার পরেও বিলে সম্মতি না আসায় ধরে নিতে হবে বিলগুলো সম্মতি পেয়েছে। এই মন্তব্যের পর বিনা সম্মতিতেই ওই ১০টি বিল তামিলনাড়ুতে আইনে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, এই রায় ঐতিহাসিক। ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য এ এক বিরাট জয়।

১২/৪/২০২৫//সুরমা টিভি /শামীমা