, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় ইউটিউবার গ্রেফতার

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ১২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • ১৩৮৯ Time View


অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের প্রভাবশালী ইউটিউবার ও ভ্রমণ ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ দাবি করছে, তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং স্পন্সরড সফরে একাধিকবার দেশটিতে ভ্রমণ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানান, জ্যোতি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। পহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তবে জ্যোতি মালহোত্রার পরিবার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার বাবা বলেছেন, জ্যোতি কোনোভাবেই গুপ্তচর নন। তিনি যথাযথ অনুমতির মাধ্যমেই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি শুধু সংস্কৃতি বিনিময়ের কাজ করে এসেছেন।

ইউটিউবে ৩ লাখ ৭৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ইনস্টাগ্রামে ১ লাখ ৩৩ হাজার ফলোয়ার রয়েছে জ্যোতির। নিজেকে ‘পুরোনো চিন্তাধারার আধুনিক মেয়ে’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

জ্যোতির বিভিন্ন ভিডিওতে তাকে বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু দেশে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। ভারতে তিনি হিন্দু ও শিখ ধর্মীয় স্থানেও ঘুরেছেন। তবে পুলিশ বলছে, তার ভ্রমণের তথ্য প্রকাশিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পুলিশ দাবি করছে, ২০২৩ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে ভিসা চেয়ে গিয়ে তিনি প্রথম আহসান-উর-রহিম নামের এক পাকিস্তানি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ওই কর্মকর্তা চলতি মাসের ১৩ তারিখে ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। ভারত সরকার অভিযোগ করে, তার কার্যকলাপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ছিল। এর জবাবে পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে।

মার্চে জ্যোতির সর্বশেষ ভিডিওতে তাকে পাকিস্তান হাই কমিশনের রমজানের ইফতার আয়োজনে দেখা যায়। অন্যান্য ভিডিওতে তাকে পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ মন্দির পরিদর্শন, স্থানীয় বাজার ঘোরা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গেছে।

শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বলেন, তিনি অন্যান্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। পাকিস্তানে তার স্পন্সরড সফরগুলো নিয়ে আমরা আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছি। যদিও তার সরাসরি কোনও সামরিক তথ্যপ্রবাহে সম্পৃক্ততা নেই, তবু আমরা নিশ্চিত যে তিনি একটি বৃহত্তর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ।

জ্যোতির এই গ্রেফতার এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। চলতি মাসের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় একাধিক পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে কথিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাকিস্তান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

চার দিন ধরে চলা ওই সংঘাতের পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেফতারের ঘটনা নতুন নয়। তবে এক জনপ্রিয় ইউটিউবারকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে। জ্যোতির বিরুদ্ধে মামলা এখন তদন্তাধীন, তবে এই ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনার ইঙ্গিত বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

১৯/৫/২০২৫/সুরমা টিভি ২৪/ শামীমা

Popular Post

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় ইউটিউবার গ্রেফতার

Update Time : ১২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫


অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের প্রভাবশালী ইউটিউবার ও ভ্রমণ ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ দাবি করছে, তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং স্পন্সরড সফরে একাধিকবার দেশটিতে ভ্রমণ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানান, জ্যোতি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। পহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তবে জ্যোতি মালহোত্রার পরিবার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার বাবা বলেছেন, জ্যোতি কোনোভাবেই গুপ্তচর নন। তিনি যথাযথ অনুমতির মাধ্যমেই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি শুধু সংস্কৃতি বিনিময়ের কাজ করে এসেছেন।

ইউটিউবে ৩ লাখ ৭৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ইনস্টাগ্রামে ১ লাখ ৩৩ হাজার ফলোয়ার রয়েছে জ্যোতির। নিজেকে ‘পুরোনো চিন্তাধারার আধুনিক মেয়ে’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

জ্যোতির বিভিন্ন ভিডিওতে তাকে বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু দেশে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। ভারতে তিনি হিন্দু ও শিখ ধর্মীয় স্থানেও ঘুরেছেন। তবে পুলিশ বলছে, তার ভ্রমণের তথ্য প্রকাশিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পুলিশ দাবি করছে, ২০২৩ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে ভিসা চেয়ে গিয়ে তিনি প্রথম আহসান-উর-রহিম নামের এক পাকিস্তানি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ওই কর্মকর্তা চলতি মাসের ১৩ তারিখে ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। ভারত সরকার অভিযোগ করে, তার কার্যকলাপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ছিল। এর জবাবে পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে।

মার্চে জ্যোতির সর্বশেষ ভিডিওতে তাকে পাকিস্তান হাই কমিশনের রমজানের ইফতার আয়োজনে দেখা যায়। অন্যান্য ভিডিওতে তাকে পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ মন্দির পরিদর্শন, স্থানীয় বাজার ঘোরা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গেছে।

শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বলেন, তিনি অন্যান্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। পাকিস্তানে তার স্পন্সরড সফরগুলো নিয়ে আমরা আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছি। যদিও তার সরাসরি কোনও সামরিক তথ্যপ্রবাহে সম্পৃক্ততা নেই, তবু আমরা নিশ্চিত যে তিনি একটি বৃহত্তর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ।

জ্যোতির এই গ্রেফতার এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। চলতি মাসের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় একাধিক পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে কথিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাকিস্তান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

চার দিন ধরে চলা ওই সংঘাতের পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেফতারের ঘটনা নতুন নয়। তবে এক জনপ্রিয় ইউটিউবারকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে। জ্যোতির বিরুদ্ধে মামলা এখন তদন্তাধীন, তবে এই ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনার ইঙ্গিত বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

১৯/৫/২০২৫/সুরমা টিভি ২৪/ শামীমা