, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানি ওয়াজিব হবেকত টাকা থাকলে?

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • ১৩৮৫ Time View

সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

কোরবানি একটি উৎসব মুখর ইবাদত। এ উৎসবের আনন্দ ও খুশি শুধু কোরবানি দাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা; বরং সকল মুসলমানের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন রঙ্গে ও সাজে কোরবানির পশুর বিচরণে প্রতিটি অলিতে গলিতে বইতে থাকে আনন্দের ঢেউ।
মৌলিক প্রয়োজন বলতে ঐ সকল জিনিসকে বুঝানো হয় যা ছাড়া মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন তাদের উপর সম্পদের কৃতজ্ঞতা ও যুগের পর যুগ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার শোকর এবং হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাহকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কোরবানিকে ওয়াজিব করেছেন। এর রয়েছে ইহকালীন এবং পরকালীন অনেক লাভ।

তবে আজকে আমাদের আলোচনা কতটুকু সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে? হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا হজরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ- ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ- ৩১২৩)

বর্ণিত হাদিস শরিফে সামর্থ্যবান বলে ওই ব্যক্তি কে বোঝানো হয়েছে, যার কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং ঋণ বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) কিংবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) অথবা তার সমপরিমাণ টাকা রয়েছে। একেই নেসাব বলা হয়। এ পরিমাণ টাকা পয়সা কিংবা সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিকে ইসলামী শরীয়তে সাহেবে নেসাব বা সামর্থ্যবান বলা হয়।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ মে মঙ্গলবার ২০২৫ ইং সনাতন রুপার মূল্য প্রতি ভরি ১৭২৬ টাকা। তাহলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য আসে ৯০ হাজার ৬১৫ টাকা।

সুতরাং কারো কাছে যদি জিলহজ মাসের ১০ থেকে১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই পরিমাণ স্বর্ণরুপা, টাকা অথবা মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদ যার মূল্য ৯০ হাজার টাকার বেশি তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব।

মৌলিক প্রয়োজন বলতে কি বুঝায়?

মৌলিক প্রয়োজন বলতে ঐ সকল জিনিসকে বুঝানো হয় যা ছাড়া মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে যায়। যেমন বসবাসের বাড়ি, চলাচলের গাড়ি, উপার্জনের আসবাবপত্র, ব্যবহারের কাপড়-চোপড় এবং কাজের লোক ইত্যাদি। কোন নারীকে যদি তার স্বামী যথাযথভাবে ভরণপোষণ করে থাকেন আর উক্ত নারীর মালিকানায় কোন জমি থাকে তাহলে সেটাও মৌলিক প্রয়োজন অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।

কি পরিমান ঋণ থাকলে কোরবানি দিতে হয় না? জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেউ যদি এই পরিমাণ ঋণী হয় যে, উক্ত ঋণ পরিশোধ করলে তার নেসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে কমে যাবে। তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। এই ধরনের ব্যক্তিবর্গ শরীয়তের দৃষ্টিতে গরিব হিসেবে গণ্য।

তবে যে সকল ব্যবসায়ীগণ ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারা উক্ত ঋণ বাদ দিতে পারবেন না। ঐ ঋণ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করতে হবে। পক্ষান্তরে যারা মৌলিক প্রয়োজনের জন্য ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারাই কেবল নেসাবের হিসাব থেকে ঋণ বাদ দিতে পারবেন।

কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে পার্থক্য, কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে মৌলিকভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে। এক. যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য উক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর বিদ্যমান থাকা আবশ্যক নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকাই যথেষ্ট। দুই. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য স্বর্ণরুপা, টাকা পয়সা এবং ব্যবসার পণ্য হতে হয়।

পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সকল সম্পদ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি-জামা,গাড়ি-বাড়ি,পোশাক-আশাক, সৌন্দর্য বর্ধনের ফার্নিচার ইত্যাদি। এগুলোর মূল্য যদি উক্ত নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।
(তথ্যসূত্র, বাদায়ে সানায়ে ৫/৬৪ মুলতাকাল আবহুর পৃ ৩৩৪ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯২ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১ আল ফাতাওয়াল বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৭ ফাতাওয়ায়ে ফাকিহুল মিল্লাত ১১/১৮৮-২০০)

কোরবানি ওয়াজিব হবেকত টাকা থাকলে?

Update Time : ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

কোরবানি একটি উৎসব মুখর ইবাদত। এ উৎসবের আনন্দ ও খুশি শুধু কোরবানি দাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা; বরং সকল মুসলমানের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন রঙ্গে ও সাজে কোরবানির পশুর বিচরণে প্রতিটি অলিতে গলিতে বইতে থাকে আনন্দের ঢেউ।
মৌলিক প্রয়োজন বলতে ঐ সকল জিনিসকে বুঝানো হয় যা ছাড়া মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন তাদের উপর সম্পদের কৃতজ্ঞতা ও যুগের পর যুগ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার শোকর এবং হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাহকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কোরবানিকে ওয়াজিব করেছেন। এর রয়েছে ইহকালীন এবং পরকালীন অনেক লাভ।

তবে আজকে আমাদের আলোচনা কতটুকু সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে? হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا হজরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ- ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ- ৩১২৩)

বর্ণিত হাদিস শরিফে সামর্থ্যবান বলে ওই ব্যক্তি কে বোঝানো হয়েছে, যার কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং ঋণ বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) কিংবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) অথবা তার সমপরিমাণ টাকা রয়েছে। একেই নেসাব বলা হয়। এ পরিমাণ টাকা পয়সা কিংবা সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিকে ইসলামী শরীয়তে সাহেবে নেসাব বা সামর্থ্যবান বলা হয়।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ মে মঙ্গলবার ২০২৫ ইং সনাতন রুপার মূল্য প্রতি ভরি ১৭২৬ টাকা। তাহলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য আসে ৯০ হাজার ৬১৫ টাকা।

সুতরাং কারো কাছে যদি জিলহজ মাসের ১০ থেকে১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই পরিমাণ স্বর্ণরুপা, টাকা অথবা মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদ যার মূল্য ৯০ হাজার টাকার বেশি তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব।

মৌলিক প্রয়োজন বলতে কি বুঝায়?

মৌলিক প্রয়োজন বলতে ঐ সকল জিনিসকে বুঝানো হয় যা ছাড়া মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে যায়। যেমন বসবাসের বাড়ি, চলাচলের গাড়ি, উপার্জনের আসবাবপত্র, ব্যবহারের কাপড়-চোপড় এবং কাজের লোক ইত্যাদি। কোন নারীকে যদি তার স্বামী যথাযথভাবে ভরণপোষণ করে থাকেন আর উক্ত নারীর মালিকানায় কোন জমি থাকে তাহলে সেটাও মৌলিক প্রয়োজন অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।

কি পরিমান ঋণ থাকলে কোরবানি দিতে হয় না? জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেউ যদি এই পরিমাণ ঋণী হয় যে, উক্ত ঋণ পরিশোধ করলে তার নেসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে কমে যাবে। তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। এই ধরনের ব্যক্তিবর্গ শরীয়তের দৃষ্টিতে গরিব হিসেবে গণ্য।

তবে যে সকল ব্যবসায়ীগণ ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারা উক্ত ঋণ বাদ দিতে পারবেন না। ঐ ঋণ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করতে হবে। পক্ষান্তরে যারা মৌলিক প্রয়োজনের জন্য ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারাই কেবল নেসাবের হিসাব থেকে ঋণ বাদ দিতে পারবেন।

কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে পার্থক্য, কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে মৌলিকভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে। এক. যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য উক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর বিদ্যমান থাকা আবশ্যক নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকাই যথেষ্ট। দুই. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য স্বর্ণরুপা, টাকা পয়সা এবং ব্যবসার পণ্য হতে হয়।

পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সকল সম্পদ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি-জামা,গাড়ি-বাড়ি,পোশাক-আশাক, সৌন্দর্য বর্ধনের ফার্নিচার ইত্যাদি। এগুলোর মূল্য যদি উক্ত নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।
(তথ্যসূত্র, বাদায়ে সানায়ে ৫/৬৪ মুলতাকাল আবহুর পৃ ৩৩৪ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯২ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১ আল ফাতাওয়াল বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৭ ফাতাওয়ায়ে ফাকিহুল মিল্লাত ১১/১৮৮-২০০)