সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:
খানাখন্দে বেহাল বাগেরহাট বাস টার্মিনাল, নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ বাগেরহাট জেলার একমাত্র কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা।বাস মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে টার্মিনালটিতে সংস্কার না হওয়ায় অসংখ্য খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।বাস মালিকরা টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন বাস প্রতি ৫০ টাকা করে টোল দিয়ে আসছেন। টার্মিনালটি সংস্কারের জন্য বাস মালিক সমিতি, বাগেরহাট পৌরসভাকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।দীর্ঘদিনের ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা আগামী বর্ষার আগে টার্মিনালের সংস্কারের কাজ করার দাবি জানিয়েছে।বাস টার্মিনাল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ব্যবহার উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাসুম।বাগেরহাট জেলার অভ্যন্তরীণ ১৬টি রুটে যাত্রী পরিবহনের বাস-মিনিবাস এ টার্মিনাল হয়ে চলাচল করে। খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন আন্তঃজেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ১০০টির মত বাস এখান থেকে যাতায়াত করে। এ টার্মিনালে অন্তত ২০০ গাড়ি রাখা যায়।অথচ বৃষ্টি হলেই টার্মিনালের ভেতরে ও আশপাশে পানি জমে যায়। কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় টার্মিনালের পুরো এলাকা। এতে এক দিকে যেমন তীব্র জট লেগে থাকে, অন্যদিকে কাদাপানির কারণে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।বাগেরহাট শহরের বাসিন্দা রাসেলুর রহমান বলেন, “জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটির অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষায় অনেক কষ্ট করে কাদাপানি মাড়িয়ে টিকেট কাটতে হয়। অনেক সময় পাশ দিয়ে গাড়ি গেলে ময়লা পানিতে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।বাসে ওঠার সময়ও কাপড়ে কাদা লেগে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিজিয়ার রহমান বলছিলেন, খুলনার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। অন্তত দশ বছর ধরে তিনি জেলা বাস টার্মিনাল হয়ে বাসে যাতায়াত করেন। বহু বছর ধরে এই বাস টার্মিনালের বেহাল দশা। জায়গায় জায়গায় গর্তের কারণে হাঁটাচলা করা যায় না।এ ছাড়া খানাখন্দে গাড়ি দেবে গিয়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এতে বাস মালিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।২০০৪ সালে পৌরসভা এলাকার দুই একর জমির ওপর বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে পৌরসভা এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে।বাস মালিক সরদার জসিম উদ্দিন বলেন, দুই দশকের বেশি সময় আগে বাগেরহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। বাগেরহাট জেলার একমাত্র কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি। অথচ বাস মালিকরা এই বাস টার্মিনালটি ব্যবহার করার জন্য প্রতিদিন বাস প্রতি ৫০ টাকা করে টোল দিয়ে আসছেন।মোকলেছুর রহমান নামের এক বাস শ্রমিক বলছিলেন, পুরো বাসস্ট্যান্ড জুড়ে খানাখন্দ ও গর্তে ভরে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত বাসের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।আরেক বাস মালিক ফুয়াদ হাসান বলেন, “গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় বাস মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ ভোগান্তি সমাধানে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মালিক সমিতি নিজেদের অর্থ ব্যয় করে মাঝে মাঝে কিছু সংস্কার করছে।এখনও টার্মিনালে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। ভালো যাত্রী ছাউনি নেই। বাসস্ট্যান্ডের বাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আমরা যাতে বাসস্ট্যান্ডটি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারি তার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাই।বাগেরহাট আন্তঃজেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি সদস্য সচিব মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছে ২০ বছরের বেশি সময় আগে। নির্মাণের পর কর্তৃপক্ষ একবারের জন্যও সংস্কার করেনি। এখানে মালিকদের কোটি কোটি টাকার গাড়ি পার্কিং থাকে। আমরা নিয়মিত পৌর টোল দিয়ে থাকি অথচ আমরা সুবিধা পাই না।বারবার সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সবশেষ গত জানুয়ারি মাসেও আমরা টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ করতে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা চাই, আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে টার্মিনালটির উন্নয়ন কাজ হোক।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, “আমি নিজে দেখেছি বাসস্ট্যান্ডে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাস পার্কিং করে রাখা ও চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত কিছু সংস্কার কাজ করা হবে এবং তা খুব দ্রুতই করা হবে।“আর বাসস্ট্যান্ডের নষ্ট থাকা বাতিগুলো দুয়েকদিনের মধ্যে মেরামত করে দেওয়া হবে। বাসস্ট্যান্ডের টার্মিনালটির চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। যাতে বাস মালিক সমিতি টার্মিনালটি সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারে সেই উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।