সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:
চাঁদে বেসরকারি মিশনে আবারও ব্যর্থ হলো জাপানি মহাকাশ কোম্পানি আইস্পেস। শুক্রবার সকালে তাদের দ্বিতীয় চন্দ্র ল্যান্ডার ‘রেজিলিয়েন্স’ নির্ধারিত অবতরণকালে চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। টোকিওভিত্তিক এই কোম্পানিটি জানিয়েছে, ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠের উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে না পারায় নির্ধারিত গতিতে অবতরণে ব্যর্থ হয় এবং এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আইস্পেসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রিও উজিইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখানে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তিগত সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। যেমন, প্রপালশন সিস্টেম, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কিংবা সেন্সরের ত্রুটি।
রেজিলিয়েন্স ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে জাপানের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধানে আবারও বহু বছরের বিরতি দেখা দিলো। তবে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস কর্মসূচিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে এবং বহু জাপানি প্রতিষ্ঠান এখনও চাঁদকে ব্যবসার নতুন দিগন্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রায় দুই মিনিট আগেই ফ্লাইট ডেটা হারিয়ে যায়। ফলে টোকিওর সুমিতোমো মিৎসুই ব্যাংকের মিশন-অংশীদার কেন্দ্রে একত্রিত ৫০০-এর বেশি কর্মী, বিনিয়োগকারী ও সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে হঠাৎ নীরবতা নেমে আসে।
আইস্পেসের শেয়ার বাজারে বিক্রির চাপ সামলাতে না পেরে লেনদেন স্থগিত করা হয়। দিনে শেয়ারের সর্বোচ্চ পতনের সীমা ছুঁয়ে ফেললে প্রায় ২৯ শতাংশ দাম পড়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয় সংশ্লিষ্ট সূত্র। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির বাজারমূল্য ছিল ১১ হাজার কোটি ইয়েন (৭৬৬ মিলিয়ন ডলার)।
তবে কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুমপেই নোজাকি জানান, এই দুর্ঘটনা সত্ত্বেও কোম্পানির সামনে কোনও আর্থিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই, বরং তারা নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা পাচ্ছে।
২০২৩ সালেও আইস্পেসের প্রথম চন্দ্র ল্যান্ডার একইভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন উচ্চতা নির্ধারণে ত্রুটি থাকায় সফটওয়্যার আপডেট করা হলেও রেজিলিয়েন্সের হার্ডওয়্যারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়নি।
রেজিলিয়েন্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল চার চাকার একটি রোভার, যেটি আইস্পেসের লুক্সেমবার্গ ইউনিট তৈরি করেছিল। এছাড়া এতে যুক্ত ছিল জাপানি কোম্পানি ও একটি তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো মোট পাঁচটি বৈজ্ঞানিক উপকরণ, যেগুলোর মূল্য ছিল ১.৬ কোটি ডলার।
ল্যান্ডারটির গন্তব্য ছিল ‘মারে ফ্রিগোরিস’ নামের এক ব্যাসল্ট প্রান্তর, যেটি চাঁদের উত্তর মেরুর প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অবতরণ সফল হলে ২.৩ মিটার উচ্চতার ল্যান্ডার ও রোভারটি ১৪ দিনব্যাপী নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই কাজ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার চুক্তির আওতায় করা হতো।
রেজিলিয়েন্স জানুয়ারিতে স্পেসএক্স রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে। একই রকেটে যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ারফ্লাই এর ব্লু গোস্ট ল্যান্ডার, যা দ্রুতগতির কক্ষপথে যেয়ে মার্চে সফলভাবে অবতরণ করে।
এর আগে, বাণিজ্যিকভাবে চাঁদের মাটিতে প্রথম সফলভাবে অবতরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইনটুইটিভ মেশিনস। চলতি বছর তাদের দ্বিতীয় ল্যান্ডার অ্যাথেনাও অবতরণ করে, যদিও সেটিও উল্টে পড়েছিল।
গত বছর জাতীয় মহাকাশ সংস্থা জাকসার মাধ্যমে ‘স্লিম’ ল্যান্ডারের সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে জাপান বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে সফট ল্যান্ডিং সম্পন্ন করে। এরপর জাপান ও নাসার মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যাতে জাপানি নভোচারীরা আর্টেমিস কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন এবং বেসরকারি গবেষণার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা চালানো হবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, আইস্পেসকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা শেষ হয়ে যায়নি।
তবে রিৎসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজুতো সাইকি মনে করেন, যেহেতু বেসরকারি মিশনে একাধিকবার ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে, তাই জাপানের কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বিদেশি কোম্পানির সেবাও বিবেচনা করতে পারে।
আইস্পেস ২০২৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বড় আকারের তৃতীয় ল্যান্ডার পাঠাতে চায়, যা হবে নাসার কমার্শিয়াল লুনার পে-লোড সার্ভিসেস প্রোগ্রামের অংশ। তারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে ছয়টি মিশনের পরিকল্পনা করছে।
আইস্পেসের প্রধান নির্বাহী তাকেশি হাকামাদা বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাজেট কর্তনের মধ্যে সীমিত ব্যয়ে কার্যকর মিশন চালানোর জন্য নাসার চাহিদা পূরণে প্রস্তুত। এই লক্ষ্যেই আমাদের মার্কিন ইউনিটকে সবরকম সহযোগিতা দিয়ে যাব।