সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের চতুর্থ দিন সোমবার তেহরানের হাসপাতালগুলোতে রক্তাক্ত দৃশ্য ফুটে উঠছে। ইমাম খোমেনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় একযোগে বহু আহত ব্যক্তি আসার পর পরিস্থিতি ‘রক্তস্নানে’ পরিণত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, চারপাশে শুধু চিৎকার, কান্না আর রক্ত। শুরুর দিকে আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কাকে আগে বাঁচানো দরকার।
ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ২৭৭ জন আহত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ২২৪ জন মারা গেছেন। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
তেহরানের পাশের শহর কারাজের এক চিকিৎসক বলেন, আমরা জানিই না কে বেঁচে আছেন, কে মারা গেছেন। কারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন, তাও জানি না। আমরা কেবল চেষ্টা করছি যতজনের সম্ভব প্রাণ বাঁচাতে।
চিকিৎসকরা জানান, অনেক মা-বাবা আহত অবস্থায় সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে এসেছেন। পরে বুঝেছেন তারাও রক্তাক্ত। কারও শরীরে ধাতব টুকরো ঢুকে পড়েছে, কারও ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আবার কারও সারা শরীর আগুনে পুড়ে গেছে।
একজন বলেন, চার বছর বয়সী শিশুর হাত-পা ভেঙে গেছে। আমরা পেছনে ফিরে তাকানোর সময়ও পাচ্ছি না।
ইরান সরকারের মুখপাত্র হোসেইন কেরমানপুর জানিয়েছেন, হতাহতদের ৯০ শতাংশই বেসামরিক মানুষ। অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তারা কেবল সরকারের সামরিক স্থাপনায় হামলা করছে।
সোমবার এক বিমানঘাঁটিতে সফরের সময় নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরানের আকাশ যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, আমরা কেবল সরকারিভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করি। ইরানি শাসকগোষ্ঠীর মতো বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করি না।
তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরায়েল পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচারে বোমা পড়ার সময় উপস্থাপক দৌড়ে স্টুডিও ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরান পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এখনও কোনও মিমাংসার ইঙ্গিত নেই।
ইমাম খোমেনি হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, গত তিনদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। রোগীদের যেভাবে এনে ফেলা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আমরা কোনও রণাঙ্গণের হাসপাতাল চালাচ্ছি। এটা ভয়াবহ।
ধারাবাহিক এই হামলার মধ্যে ইরানের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসকরা বিশ্রাম না নিয়েই পালা করে কাজ করছেন, খাবার বা পানি খাওয়ারও সময় পাচ্ছেন না। কারাজের ওই চিকিৎসক বলেন ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন, ভোরের পর মনে হচ্ছে আরও লাশ আসবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান