, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ১০:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • ১৩৯২ Time View


সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

সোমবার (২৩ জুন) সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দশম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য ২০ জন অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফারুক-ই-আজম আরও বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখি নাই বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে  যাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘ জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তা ছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে।

তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেওয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন।  তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া  এই বি” ক্যাটাগরির।

Popular Post

এবার সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

Update Time : ১০:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫


সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

সোমবার (২৩ জুন) সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দশম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য ২০ জন অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফারুক-ই-আজম আরও বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখি নাই বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে  যাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘ জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তা ছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে।

তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেওয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন।  তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া  এই বি” ক্যাটাগরির।