, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞানীরা নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কী বলছেন

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৪৩২ Time View

অনলাইন নিউজ ডেক্স : আমরা দিচ্ছি পুরো ঢাকা, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী শহরে শতভাগ হোম ডেলিভারি। নেট দিয়ে ঢেকে রেখে রস সংগ্রহ করি, যে কারণে নিপাহ ভাইরাসের কোনো ঝুঁকি আমাদের খেজুরের রসে নেই। ফ্রোজেন করে পাঠানো হবে, যে কারণে স্বাদ থাকবে অক্ষুণ্ন।

এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে খেজুরের রস বিক্রি করছে ফেসবুকভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই একটি পেজ নয়, এমন অনেক ফেসবুক পেজ আছে, যেগুলো থেকে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। কেউ কেউ বাগান থেকে রস পান করতে করতে ভিডিও করে তা পেজে দিচ্ছেন।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে খেজুরের কাঁচা রসের প্রচারে বিজ্ঞাপন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। খেজুরের কাঁচা রস খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই বলে যেসব বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, তা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক, মিথ্যা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন।

আইইডিসিআর সম্প্রতি জানিয়েছে, গত বছর নিপাহ ভাইরাসে চার জেলায় (খুলনা, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ ও নওগাঁ) পাঁচজন আক্রান্ত হন। পরে ওই পাঁচজনই মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৪৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা গেছেন।

কাঁচা রসের বাধাহীন প্রচার শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই ফেসবুকে শুরু হয় খেজুরের কাঁচা রস বিক্রির বিজ্ঞাপন। অন্তত ১২টি ফেসবুক পেজের রস বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেছেন এই প্রতিবেদক। এসব পেজের বক্তব্য প্রায় অভিন্ন। আর প্রায় প্রতিটি বিজ্ঞাপনেই জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, তাদের রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস হবে না।

ঢাকার মালিবাগের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হিমায়িত রস সরবরাহ করা হয়। অর্ডার দিলে দুই দিন পর রস পাওয়া যায় রাজধানীর যেকোনো স্থানে।

খেজুরের রস সরবরাহ করেন ফেসবুকভিত্তিক এমন একটি পেজের এক স্বত্বাধিকারী বলেন, আমরা নেট দিয়ে পুরো বাগান ঢেকে ফেলি। আর আমরা তো খাচ্ছি, বিক্রি করছি। কেউ তো কোনো দিন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে প্রথমে মানুষে ছড়ায়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারেন। খাদ্যের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ধরন কিছুটা করোনাভাইরাসের মতো। তবে এতে মৃত্যুর হার করোনার চেয়ে অনেক বেশি। পেয়ারাসহ বিভিন্ন বাদুড়ে খাওয়া ফল থেকেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

বিজ্ঞানীদের কথা নেট, জাল বা টিন, যা দিয়েই সুরক্ষার কথা বলা হোক না কেন, কোনোভাবেই বাদুড়ের হাত থেকে রসের সুরক্ষার উপায় নেই, এমন মন্তব্য গবেষকদের। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জাতীয় নিপাহ ভাইরাস সার্ভিল্যান্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ মঈনউদ্দিন সাত্তার বলেন, জাল বা টিন যা-ই হোক না কেন, এসব দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ে। আমরা গবেষণায় দেখেছি, মূলত বাদুড়ের মূত্রই বেশি মেশে রসের সঙ্গে।

প্রকৃতিগতভাবেই বাদুড়ের প্রস্রাব করার প্রবণতা বেশি। এর কারণ প্রসঙ্গে মঈনউদ্দিন সাত্তার বলেন, বাদুড়ের মূত্রথলি অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট। বাদুড় তাই রস খেতে খেতেই প্রস্রাব করে।

জাল বা টিন দিয়ে সুরক্ষায় আরেকটি ক্ষতিকর দিক আছে। আর তা হলো, বাদুড় যদি রস খেতে বাধা পায়, তবে বিরক্ত হয়। আর বিরক্ত হলে বাদুড়ের প্রস্রাব করার প্রবণতা আরও বেড়ে যায় বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে।

সরকার যা বলছে আইইডিসিআর নিপাহ ভাইরাসের বিপদ থেকে বাঁচতে সতর্কবার্তা দিয়েছে, কিন্তু এর প্রচার তেমন নেই। এখন রসের যে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তাহমিনা শিরীন। তাঁর কথা, এসব প্রচার বন্ধে আইনি ব্যবস্থা দরকার। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তা করতে পারে।

খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি হয়। এ থেকে নানা পিঠা হয়। খেজুরের গুড়ের একটি বড় বাজার আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জ্বাল দেওয়া রস বা খেজুড়ের গুড় খেলে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু কাঁচা রস পান অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

কাঁচা রসের প্রচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকার কতটুকু তৎপর, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, এই রস যে ক্ষতিকর, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে পেলে এবং আইন তৈরির নির্দেশ পেলে আমরা সচেষ্ট হব কিন্তু, এর নির্দেশ তো আসতে হবে।

প্রকাশ : ১৪/১/২০২৫/সুরমা টিভি ২৪/ইয়াসমিন

বিজ্ঞানীরা নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কী বলছেন

Update Time : ০৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

অনলাইন নিউজ ডেক্স : আমরা দিচ্ছি পুরো ঢাকা, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী শহরে শতভাগ হোম ডেলিভারি। নেট দিয়ে ঢেকে রেখে রস সংগ্রহ করি, যে কারণে নিপাহ ভাইরাসের কোনো ঝুঁকি আমাদের খেজুরের রসে নেই। ফ্রোজেন করে পাঠানো হবে, যে কারণে স্বাদ থাকবে অক্ষুণ্ন।

এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে খেজুরের রস বিক্রি করছে ফেসবুকভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই একটি পেজ নয়, এমন অনেক ফেসবুক পেজ আছে, যেগুলো থেকে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। কেউ কেউ বাগান থেকে রস পান করতে করতে ভিডিও করে তা পেজে দিচ্ছেন।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে খেজুরের কাঁচা রসের প্রচারে বিজ্ঞাপন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। খেজুরের কাঁচা রস খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই বলে যেসব বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, তা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক, মিথ্যা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন।

আইইডিসিআর সম্প্রতি জানিয়েছে, গত বছর নিপাহ ভাইরাসে চার জেলায় (খুলনা, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ ও নওগাঁ) পাঁচজন আক্রান্ত হন। পরে ওই পাঁচজনই মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৪৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা গেছেন।

কাঁচা রসের বাধাহীন প্রচার শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই ফেসবুকে শুরু হয় খেজুরের কাঁচা রস বিক্রির বিজ্ঞাপন। অন্তত ১২টি ফেসবুক পেজের রস বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেছেন এই প্রতিবেদক। এসব পেজের বক্তব্য প্রায় অভিন্ন। আর প্রায় প্রতিটি বিজ্ঞাপনেই জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, তাদের রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস হবে না।

ঢাকার মালিবাগের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হিমায়িত রস সরবরাহ করা হয়। অর্ডার দিলে দুই দিন পর রস পাওয়া যায় রাজধানীর যেকোনো স্থানে।

খেজুরের রস সরবরাহ করেন ফেসবুকভিত্তিক এমন একটি পেজের এক স্বত্বাধিকারী বলেন, আমরা নেট দিয়ে পুরো বাগান ঢেকে ফেলি। আর আমরা তো খাচ্ছি, বিক্রি করছি। কেউ তো কোনো দিন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে প্রথমে মানুষে ছড়ায়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারেন। খাদ্যের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ধরন কিছুটা করোনাভাইরাসের মতো। তবে এতে মৃত্যুর হার করোনার চেয়ে অনেক বেশি। পেয়ারাসহ বিভিন্ন বাদুড়ে খাওয়া ফল থেকেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

বিজ্ঞানীদের কথা নেট, জাল বা টিন, যা দিয়েই সুরক্ষার কথা বলা হোক না কেন, কোনোভাবেই বাদুড়ের হাত থেকে রসের সুরক্ষার উপায় নেই, এমন মন্তব্য গবেষকদের। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জাতীয় নিপাহ ভাইরাস সার্ভিল্যান্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ মঈনউদ্দিন সাত্তার বলেন, জাল বা টিন যা-ই হোক না কেন, এসব দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ে। আমরা গবেষণায় দেখেছি, মূলত বাদুড়ের মূত্রই বেশি মেশে রসের সঙ্গে।

প্রকৃতিগতভাবেই বাদুড়ের প্রস্রাব করার প্রবণতা বেশি। এর কারণ প্রসঙ্গে মঈনউদ্দিন সাত্তার বলেন, বাদুড়ের মূত্রথলি অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট। বাদুড় তাই রস খেতে খেতেই প্রস্রাব করে।

জাল বা টিন দিয়ে সুরক্ষায় আরেকটি ক্ষতিকর দিক আছে। আর তা হলো, বাদুড় যদি রস খেতে বাধা পায়, তবে বিরক্ত হয়। আর বিরক্ত হলে বাদুড়ের প্রস্রাব করার প্রবণতা আরও বেড়ে যায় বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে।

সরকার যা বলছে আইইডিসিআর নিপাহ ভাইরাসের বিপদ থেকে বাঁচতে সতর্কবার্তা দিয়েছে, কিন্তু এর প্রচার তেমন নেই। এখন রসের যে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তাহমিনা শিরীন। তাঁর কথা, এসব প্রচার বন্ধে আইনি ব্যবস্থা দরকার। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তা করতে পারে।

খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি হয়। এ থেকে নানা পিঠা হয়। খেজুরের গুড়ের একটি বড় বাজার আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জ্বাল দেওয়া রস বা খেজুড়ের গুড় খেলে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু কাঁচা রস পান অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

কাঁচা রসের প্রচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকার কতটুকু তৎপর, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, এই রস যে ক্ষতিকর, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে পেলে এবং আইন তৈরির নির্দেশ পেলে আমরা সচেষ্ট হব কিন্তু, এর নির্দেশ তো আসতে হবে।

প্রকাশ : ১৪/১/২০২৫/সুরমা টিভি ২৪/ইয়াসমিন