মানবপাচার এবং অবৈধ বসবাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে কুয়েত সরকার। তারই অংশ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাঁড়াশি অভিযানে বড় একটি ভিসা জালিয়াতি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওই চক্রের মূলহোতাসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহদ ইউসুফ সৌদ আল-সাবাহর সরাসরি নির্দেশনায় রেসিডেন্স অ্যাফেয়ার্স ইনভেস্টিগেশন বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে, অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে আবাসিক অনুমতি দিয়ে আসছিল একটি সুসংগঠিত চক্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চক্রটি একটি পাকিস্তানি বাসিন্দার অভিযোগের ভিত্তিতে শনাক্ত করা হয়। তিনি জানান, ইয়াসির বিলাল মুহাম্মদ নামে একজন পাকিস্তানি নাগরিক তাকে কুয়েতে থাকার আবাসিক অনুমতির বিনিময়ে ৬৫০ দিনার দাবি করেন। অভিযুক্ত ইয়াসিরকে তলব করলে তিনি ভিসা প্রক্রিয়াকরণে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ইয়াসির ১১টি কোম্পানির অংশীদার এবং এসব প্রতিষ্ঠানে ১৬২ জন কর্মী নিযুক্ত ছিলেন। ওই কর্মীদের অনেকে স্বীকার করেন যে, তারা আবাসিক অনুমতির জন্য ৫০০ থেকে ৯০০ দিনার পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন।
এছাড়া, কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, তাদের পারিবারিক আবাসনের যোগ্যতা নিশ্চিত করতে ভিসায় বেতন বাড়িয়ে দেখানোর জন্য ৬০ থেকে ৭০ দিনার অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে।
আরব টাইমস বলছে, তদন্তের অংশ হিসেবে ওই ১১ কোম্পানির অনুমোদিত স্বাক্ষরকারীকেও তলব করা হয়। প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ দিনার ঘুষ প্রদান করা হতো, যা জনশক্তি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ‘সাহেল’ অ্যাপ্লিকেশনে কাজের বিজ্ঞপ্তি ও অনুমতির অ্যাক্সেস পেতে সহায়তা করত। বর্তমানে এই মামলায় মোট ১২ জন সন্দেহভাজনকে পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারীরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অফিসে তল্লাশি, দলিলপত্র জব্দ এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, কুয়েতে ফ্রি ভিসা বলতে কোনো ভিসা নেই। দেশটিতে কিছু প্রবাসী কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি মালিকানায় রেসিডেন্সি লাগিয়ে নিজের পছন্দ মতো স্থানে কাজ করেন। যদিও কুয়েতে অনুমতিবিহীন অন্যত্র কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ অনেকে ফ্রি ভিসার নামে বাৎসরিক ভিত্তিতে টাকা দিয়ে কোথাও রেসিডেন্সি নবায়ন করেন। আর এই রেসিডেন্সি নবায়ন করতে এখানে রয়েছে অনেক কিছু কোম্পানি। মূলত এই ব্যবস্থাটা সম্পূর্ণ কুয়েতের আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধমূলক।
এছাড়া অনেক অসহায় প্রবাসী অসাধু চক্রের প্রলোভনে ক্ষপ্পরে পরে কুয়েতে এসে নিরুপায় হয়ে প্রতি বছর টাকা দিয়ে কোথাও না কোথাও আকামা বা রেসিডেন্সি নবায়ন করে থাকেন। ফ্রি আকামা বা রেসিডেন্সি নবায়ন করতে গিয়ে টাকা লেনদেনেও প্রতারিতও হন অনেক প্রবাসী।

SURMA TV 24 










