সিলেট অফিস
 
নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে হকারদের পুণবার্সনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি জায়গাও নির্ধারণ করা আছে। এটি আবার কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
 
মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক বলেন, কিনব্রিজে আর হকার বসতে দেওয়া হবে না। এখন মোটর সাইকেল চলাচল করে। ব্রিজে আর মোটর সাইকেলও উঠতে দেওয়া হবে না। এটি শুধু হাঁটাহাটির জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। মোটর সাইকেল যাতে ব্রিজে উঠতে না পারে এ জন্য ব্রিজের দুই প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শনিবার থেকেই এই কাজ শুরু হবে।
 
কিনব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। তবে এখন থেকে মোটর সাইকেল চলাচলও বন্ধ করে কেবল হাঁটাচলার জন্য এই সেতুটি উন্মুক্ত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। এই উদ্যোগ সফল হলে ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই সেতু হবে দেশের দীর্ঘতম পদচারী সেতু। যদিও এর আগে সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে দুই বার এ উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে সফল হওয়া যায়নি।
 
১৯৩৩ সালে নির্মিত হয় ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৮ ফুট প্রস্তের কিনব্রিজ। এটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৩৬ সালে। ভারতের আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামেই কিনব্রিজ হিসেবে নামকরণ করা হয়। লোহা দিয়ে লাল ধনুকের মতো বাঁকানো এই সেতুটি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষনীয়।
 
২০১৯ সালে সেতুটিকে সংরক্ষণ করতে সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে ওই বছরের ৩১ আগস্ট মধ্য রাতে কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুর সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড টানানো হয়।
 
কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর সেতুর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের যাতায়াত সুবিধার জন্য এ সেতু দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানান। কিছুদিন পর কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লাগানো লোহার বেষ্টনী ভেঙে রিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় পুরো বেষ্টনীই গায়েব হয়ে যায়।
 
মতবিনিময় সভায় আলী আমজদের ঘড়িঘরে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে স্থাপনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, সিলেটের যে কটি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে আলী আমজদের ঘড়ি অন্যতম। এই ঘড়িঘরে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। এনিয়ে আপত্তি উঠায় ঘড়িঘর থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশপাশে অন্য কোথাও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
 
সারওয়ার আলম বলেন, চাঁদনীঘাটে সুরমা নদীর তীরে ট্রাক পাকিং করে রাখা হয়। ফলে এইখানে যারা ঘুরতে আসেন তারা দুর্ভোগে পড়েন। এখন থেকে এখানে আর ট্রাক পার্কিং করতে দেওয়া হবে না। আগামী শনিবার থেকেই এই এলাকাকে পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
 
প্রসঙ্গত, ‘হকারদের দখলে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক-ফুটপাত’ শিরোনামে গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সিলেটের জনমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। তৎপর হয়ে উঠেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সাওরয়ার আলম। সংবাদ প্রকাশের পর দিনই সাংবাদিকদের তাঁর উদ্যোগের কথা জানান। এমন সংবাদ প্রকাশের জন্য তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।