, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড় গোলাপগঞ্জে বিএমএসএফ এর কমিটি গঠন, সভাপতি বদরুল আলম, সম্পাদক শাহ আলম এবার শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ। শহীদুল আলমদের বহনকারী জাহাজ আ’টকের তথ্য জানাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা সাংবাদিক ইলিয়াস : এনসিপি বলে এদেশে কিছু থাকবে না নিজেদের নির্দেশনা মানছে সরকার? উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টার বহর নিয়ে যত সমালোচনা। মৃত্যুর দুইদিন পার, দাফন নিয়ে সরকার-পরিবারের দ্বন্দ্বে হাসপাতালেই তোফায়েল আহমেদের মরদেহ। খুলনায় ঘুমন্ত যুবককে গু’লি করে হ’ত্যা। ৫ আগস্ট হাসিনার কয়েক হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলে এনটিএমসি।
নোটিশ :
মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড় গোলাপগঞ্জে বিএমএসএফ এর কমিটি গঠন, সভাপতি বদরুল আলম, সম্পাদক শাহ আলম এবার শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ। শহীদুল আলমদের বহনকারী জাহাজ আ’টকের তথ্য জানাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা সাংবাদিক ইলিয়াস : এনসিপি বলে এদেশে কিছু থাকবে না নিজেদের নির্দেশনা মানছে সরকার? উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টার বহর নিয়ে যত সমালোচনা। মৃত্যুর দুইদিন পার, দাফন নিয়ে সরকার-পরিবারের দ্বন্দ্বে হাসপাতালেই তোফায়েল আহমেদের মরদেহ। খুলনায় ঘুমন্ত যুবককে গু’লি করে হ’ত্যা। ৫ আগস্ট হাসিনার কয়েক হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলে এনটিএমসি।

ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে সিলেট!

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৩৯৪ Time View

Oplus_131072


আহমদ মারুফ, সিলেট

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট অঞ্চল বর্তমানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করছেন ভূতত্ত্ব ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞরা। ভূ-অবস্থানগত কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ একটি সক্রিয় চ্যুতি অঞ্চলের (ফল্ট লাইনের) ওপর অবস্থিত। ২০১৯ সালে শহরের ২৫টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ভাঙা বা সংস্কারের সুপারিশ করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ভবনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক অবস্থান ও ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে এ অঞ্চল বড় ধরনের ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। ঘন ঘন মৃদু ভূকম্পন বড় ভূমিকম্পেরই পূর্বাভাস।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘ভারতের আসাম, মেঘালয়, ডাউকি এলাকায় অনেকগুলো সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। এসব ফল্ট প্রায়ই ঝাঁকুনি দিয়ে সরে যেতে চাচ্ছে। এতে প্রায়ই ছোট ছোট ভূকম্পন হচ্ছে। এতে বুঝা যায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ২০১৯ সালে নগরীর ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেখিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তালিকায় থাকা চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংস্কার করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি ১৮টি স্থাপনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক। এসব স্থাপনার মধ্যে বাসাবাড়ি, বিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

নগর প্রশাসনের এমন দুর্বলতাতে খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে এসব স্থাপনার। রঙ দিয়ে পুরনো এসব ভবনকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে বসবাস।

সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকায় জরাজীর্ণ বিপণিবিতান ‘রাজা ম্যানশন’। ২০১৯ সালে নগরে জরিপ চালিয়ে আরও কয়েকটি ভবনের সঙ্গে এই ভবনকেও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সিলেট সিসিক। সে সময় ওই ভবন ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে রাজা ম্যাশন। এরপর রঙ পাল্টে হলুদ রূপে ফের খুলে দেওয়া হয় এই মার্কেট। একই অবস্থা জিন্দাবাজারের ‘মিতালী ম্যানশন’ বহুতল ভবনের। ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা এ ভবনটির রঙ পাল্টে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর সিলেট নগরের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন ভেঙে ফেলা, সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্পসহনীয়তা পরীক্ষাসহ কিছু উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তখন কয়েকটি ভবন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর নগরের ২৫টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিসিক।

ওই দিনই নগরের সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশন ও রাজা ম্যানশন নামের ৭টি বিপণিবিতানকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে নগরের প্রায় ৪২ হাজার বহুতল ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিক। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি।

এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ি প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ১০টি অতি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন বন্ধ করার নির্দেশনা আমরা দিয়েছিলাম। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এগুলো সংস্কার করার জন্যও আমরা মালিকপক্ষকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা তা শুনেননি। আবার ভবনগুলো ভাঙতে গেলে তারা আদালতে মামলা করে বসেন।

সিসিকের তালিকানুযায়ী, নগরীর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো হলোÑ কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেইটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেন এলাকার ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ী এলাকার ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা ৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা ৩৭৭/৮ ও শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা ৩৭৭/৯, বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী ১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ের পৌর বিপণি ও পৌর শপিং সেন্টার এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি- প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরনো ও দুর্বল। যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি শহরে গড়ে ওঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সীমান্তের ডাউকি ফল্ট। যাকে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ বলা হয়। ২০২১ সালের মে মাসে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়, তার উৎপত্তিস্থল ছিল এই ফল্ট। সবশেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভারতের আসামের উদলগুড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে। রিকটার স্কেলে যার মাত্রা ৫.৮। সে হিসেবে সিলেট লাগোয়া ভারতের এসব রাজ্যে ভূমিকম্পের বেশ কয়েকটি ফল্ট সক্রিয়। এসব ফল্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে দুশ্চিন্তার বড় কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি যে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের দুটি উৎস আছে। একটি উত্তরের দিকে আছে, আরেকটা পূর্ব দিকে। উত্তরের দিকটা হলো ডাউকি ফল্ট (ডাউকি চ্যুতি)। সিলেট থেকে কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই অংশটা খুব বিপজ্জনক।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত ৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলই ছিল সিলেট বিভাগের, গোলাপগঞ্জ, জগন্নাথপুর, মাইঝবাগ ও নবীগঞ্জে। এ ছাড়া গত দুই বছরে সিলেট ও এর পার্শবর্তী অঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের আবহাওয়া অফিস।

সিলেটের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৭৫ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে পুরনো ভবনগুলো। তবে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ ভবন নিয়ম না মেনেই তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে হলে সমস্যা হবে।

মোনালিসা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব চুরি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে সিলেট!

Update Time : ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫


আহমদ মারুফ, সিলেট

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট অঞ্চল বর্তমানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করছেন ভূতত্ত্ব ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞরা। ভূ-অবস্থানগত কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ একটি সক্রিয় চ্যুতি অঞ্চলের (ফল্ট লাইনের) ওপর অবস্থিত। ২০১৯ সালে শহরের ২৫টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ভাঙা বা সংস্কারের সুপারিশ করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ভবনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক অবস্থান ও ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে এ অঞ্চল বড় ধরনের ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। ঘন ঘন মৃদু ভূকম্পন বড় ভূমিকম্পেরই পূর্বাভাস।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘ভারতের আসাম, মেঘালয়, ডাউকি এলাকায় অনেকগুলো সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। এসব ফল্ট প্রায়ই ঝাঁকুনি দিয়ে সরে যেতে চাচ্ছে। এতে প্রায়ই ছোট ছোট ভূকম্পন হচ্ছে। এতে বুঝা যায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ২০১৯ সালে নগরীর ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেখিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তালিকায় থাকা চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংস্কার করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি ১৮টি স্থাপনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক। এসব স্থাপনার মধ্যে বাসাবাড়ি, বিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

নগর প্রশাসনের এমন দুর্বলতাতে খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে এসব স্থাপনার। রঙ দিয়ে পুরনো এসব ভবনকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে বসবাস।

সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকায় জরাজীর্ণ বিপণিবিতান ‘রাজা ম্যানশন’। ২০১৯ সালে নগরে জরিপ চালিয়ে আরও কয়েকটি ভবনের সঙ্গে এই ভবনকেও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সিলেট সিসিক। সে সময় ওই ভবন ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে রাজা ম্যাশন। এরপর রঙ পাল্টে হলুদ রূপে ফের খুলে দেওয়া হয় এই মার্কেট। একই অবস্থা জিন্দাবাজারের ‘মিতালী ম্যানশন’ বহুতল ভবনের। ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা এ ভবনটির রঙ পাল্টে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর সিলেট নগরের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন ভেঙে ফেলা, সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্পসহনীয়তা পরীক্ষাসহ কিছু উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তখন কয়েকটি ভবন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর নগরের ২৫টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিসিক।

ওই দিনই নগরের সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশন ও রাজা ম্যানশন নামের ৭টি বিপণিবিতানকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে নগরের প্রায় ৪২ হাজার বহুতল ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিক। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি।

এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ি প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ১০টি অতি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন বন্ধ করার নির্দেশনা আমরা দিয়েছিলাম। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এগুলো সংস্কার করার জন্যও আমরা মালিকপক্ষকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা তা শুনেননি। আবার ভবনগুলো ভাঙতে গেলে তারা আদালতে মামলা করে বসেন।

সিসিকের তালিকানুযায়ী, নগরীর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো হলোÑ কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেইটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেন এলাকার ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ী এলাকার ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা ৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা ৩৭৭/৮ ও শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা ৩৭৭/৯, বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী ১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ের পৌর বিপণি ও পৌর শপিং সেন্টার এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি- প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরনো ও দুর্বল। যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি শহরে গড়ে ওঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সীমান্তের ডাউকি ফল্ট। যাকে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ বলা হয়। ২০২১ সালের মে মাসে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়, তার উৎপত্তিস্থল ছিল এই ফল্ট। সবশেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভারতের আসামের উদলগুড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে। রিকটার স্কেলে যার মাত্রা ৫.৮। সে হিসেবে সিলেট লাগোয়া ভারতের এসব রাজ্যে ভূমিকম্পের বেশ কয়েকটি ফল্ট সক্রিয়। এসব ফল্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে দুশ্চিন্তার বড় কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি যে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের দুটি উৎস আছে। একটি উত্তরের দিকে আছে, আরেকটা পূর্ব দিকে। উত্তরের দিকটা হলো ডাউকি ফল্ট (ডাউকি চ্যুতি)। সিলেট থেকে কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই অংশটা খুব বিপজ্জনক।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত ৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলই ছিল সিলেট বিভাগের, গোলাপগঞ্জ, জগন্নাথপুর, মাইঝবাগ ও নবীগঞ্জে। এ ছাড়া গত দুই বছরে সিলেট ও এর পার্শবর্তী অঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের আবহাওয়া অফিস।

সিলেটের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৭৫ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে পুরনো ভবনগুলো। তবে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ ভবন নিয়ম না মেনেই তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে হলে সমস্যা হবে।