, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে: বিসিআই

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ১৩৭৭ Time View

সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, বাজেটটি রাজস্ব আহরণে অতিমাত্রায় করনির্ভর এবং এতে উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, এবারের বাজেটে রেভিনিউ আহরণকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে, করজাল বাড়ানোর কার্যকর কোনও দিকনির্দেশনা নেই। কর আদায়ের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও করেপোরেট ও ব্যক্তিখাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠনের কথা বাজেটে বলা হলেও বাস্তবে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। কারণ, উৎপাদন খাতের কাঁচামালে ভ্যাট বাড়ানোয় শিল্পে ব্যয় বেড়ে যাবে— যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিই বাড়াবে।

আনোয়ার-উল আলম বলেন, আইএমএফের ফর্মুলা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে শিল্প খাত আরও চাপে পড়বে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি, উচ্চ সুদের হার ও আমদানি ব্যয় এমনিতেই শিল্পকে সংকটে ফেলেছে। এর মধ্যে আবার শুল্ক ও কর বাড়ানো হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি জানান, রফতানিমুখী খাতের জন্য নগদ প্রণোদনা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা হচ্ছে, অথচ বিকল্প কোনও প্রণোদনা বা ফিসকাল সাপোর্ট রাখা হয়নি। কটন সুতা ও ম্যান-মেইড ফাইবারের উপর ভ্যাট ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করায় দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো বিপদে পড়বে এবং আমদানিনির্ভরতা বাড়বে।

এছাড়া, স্টিল শিল্পের কাঁচামালে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং সিমেন্ট শিল্পে মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় নির্মাণ ও আবাসন খাতেও খরচ বাড়বে বলে জানান বিসিআই সভাপতি।

ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায় এসএমই খাত বড় ধাক্কা খাবে। এই হার পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।

ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় বিসিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে নতুন উদ্যোক্তারা ইএনটি এবং এসএমই ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

তবে বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দকে স্বাগত জানিয়েছে বিসিআই। এছাড়া এসএমই খাতের ফরমালাইজেশন ও ডিজিটাল ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।

বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ— বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে— সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে কমপ্লায়েন্স ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে, যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় এবং জনগণ ও অর্থনীতি বাস্তব সুফল পায়।

Popular Post

বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে: বিসিআই

Update Time : ০১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, বাজেটটি রাজস্ব আহরণে অতিমাত্রায় করনির্ভর এবং এতে উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, এবারের বাজেটে রেভিনিউ আহরণকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে, করজাল বাড়ানোর কার্যকর কোনও দিকনির্দেশনা নেই। কর আদায়ের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও করেপোরেট ও ব্যক্তিখাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠনের কথা বাজেটে বলা হলেও বাস্তবে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। কারণ, উৎপাদন খাতের কাঁচামালে ভ্যাট বাড়ানোয় শিল্পে ব্যয় বেড়ে যাবে— যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিই বাড়াবে।

আনোয়ার-উল আলম বলেন, আইএমএফের ফর্মুলা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে শিল্প খাত আরও চাপে পড়বে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি, উচ্চ সুদের হার ও আমদানি ব্যয় এমনিতেই শিল্পকে সংকটে ফেলেছে। এর মধ্যে আবার শুল্ক ও কর বাড়ানো হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি জানান, রফতানিমুখী খাতের জন্য নগদ প্রণোদনা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা হচ্ছে, অথচ বিকল্প কোনও প্রণোদনা বা ফিসকাল সাপোর্ট রাখা হয়নি। কটন সুতা ও ম্যান-মেইড ফাইবারের উপর ভ্যাট ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করায় দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো বিপদে পড়বে এবং আমদানিনির্ভরতা বাড়বে।

এছাড়া, স্টিল শিল্পের কাঁচামালে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং সিমেন্ট শিল্পে মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় নির্মাণ ও আবাসন খাতেও খরচ বাড়বে বলে জানান বিসিআই সভাপতি।

ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায় এসএমই খাত বড় ধাক্কা খাবে। এই হার পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।

ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় বিসিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে নতুন উদ্যোক্তারা ইএনটি এবং এসএমই ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

তবে বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দকে স্বাগত জানিয়েছে বিসিআই। এছাড়া এসএমই খাতের ফরমালাইজেশন ও ডিজিটাল ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।

বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ— বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে— সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে কমপ্লায়েন্স ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে, যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় এবং জনগণ ও অর্থনীতি বাস্তব সুফল পায়।