, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শঙ্কা নিয়ে গাজায় ফিরতে শুরু করেছে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৪৪৬ Time View

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শুরুর সাথে সাথেই বিধ্বস্ত ভূমিতে ফিরতে শুরু করেছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে অনেকে উল্লাস করছেন। আবার অনেকের মধ্যেই বিষাদের সুর। কেননা তাদের সাজানো বাড়ি আর বাড়ি নেই, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যক্ররের পর ঢুকেছে ত্রাণের বিশাল বহরও। ১৫ মাসের সহিংসতা ও গণহত্যার পর উপত্যকার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে এই যুদ্ধবিরতি।

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিন ইসরাইলি নারী বন্দি মুক্তি পান। সঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিও।এই ধাপে গাজায় আটক মোট ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। ইসরাইলও কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এসময় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর ধীরে ধীরে গাজার সীমান্তে ফিরে আসার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশেরও সুযোগ দেবে ইসরাইল।তবে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার কথা বলেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরই মধ্যে তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

তিনি জানান, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপাতকালীন কৌশল হিসাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে গেছে ইসরাইল।যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর আনন্দে মেতে ওঠেন হামাস যোদ্ধারা। তারা বলছেন, আমাদের বীর শহীদদের স্মরণ করছি, যারা আল আকসায় অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। যারা আহত অবস্থায় আছে, যারা কারাগারে আছে, সবাইকে অভিনন্দন। আজ আমাদের মুক্তির দিন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই ঘরে ফিরতে শুরু করেন বাস্ত্যচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। যদিও অনেকের বাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বিধ্বস্ত বাড়ির ওপরই তাঁবু তৈরি করে সেখানে থাকবেন। নিজেদের চিরচেনা এলাকায় ফিরতে চান তারা। চান প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে আবারও আগের মতো সময় কাটাতে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের পর ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক-বোঝাই মানবিক ত্রাণ গাজা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০০টি ট্রাক উত্তরাঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে এসেছে। নষ্ট করার মতো আর সময় নেই।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয়, ওসিএইচএ বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট পরই ত্রাণবাহী প্রথম ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার একটি ‘জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ’ হবে।

তবে ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর গাজার কোথায় গেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা। আর মিসর থেকে বলা হচ্ছে, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় কেরাম শালোম এবং আল-ওগায় অন্তত ১৯৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও জ্বালানিবাহী পাঁচটি ট্রাক ঢুকেছে। এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন সীমান্তে থাকা ইসরাইলিরাও। তারা বলেন, অনেকদিন ধরেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসুক, এই প্রার্থনাই করি।

অন্যদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামাসের মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। গিডিয়ন সার বলেন, প্রথমত, সব জিম্মিদের মুক্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই কারণেই নতুন পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। একটা নয়, কয়েকটি ধাপে এই কাজ হবে। যুদ্ধের জন্য আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। সেটা অর্জনের জন্যই আপাতত হামাসের ইচ্ছা মেনে নিচ্ছি। হামাস গাজার ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যতেও এ্ই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা আসবে না বলেও মন্তব্য করেন ইসরাইলের এই মন্ত্রী।গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ৯১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১০,৭৫০ জন আহত হয়েছে।

ধ্বংস্তূপের নিচে অনেক মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করে হচ্ছে।জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার ৯২ শতাংশ বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার লাখ ১৬ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস এবং দুই লাখ ৭৬ হাজার বাড়ি ব্যাপকভাবে বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০/০১/২০২৫; সুরমা টিভি ২৪; সুমাইয়া।

শঙ্কা নিয়ে গাজায় ফিরতে শুরু করেছে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি

Update Time : ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শুরুর সাথে সাথেই বিধ্বস্ত ভূমিতে ফিরতে শুরু করেছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে অনেকে উল্লাস করছেন। আবার অনেকের মধ্যেই বিষাদের সুর। কেননা তাদের সাজানো বাড়ি আর বাড়ি নেই, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যক্ররের পর ঢুকেছে ত্রাণের বিশাল বহরও। ১৫ মাসের সহিংসতা ও গণহত্যার পর উপত্যকার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে এই যুদ্ধবিরতি।

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিন ইসরাইলি নারী বন্দি মুক্তি পান। সঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিও।এই ধাপে গাজায় আটক মোট ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। ইসরাইলও কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এসময় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর ধীরে ধীরে গাজার সীমান্তে ফিরে আসার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশেরও সুযোগ দেবে ইসরাইল।তবে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার কথা বলেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরই মধ্যে তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

তিনি জানান, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপাতকালীন কৌশল হিসাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে গেছে ইসরাইল।যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর আনন্দে মেতে ওঠেন হামাস যোদ্ধারা। তারা বলছেন, আমাদের বীর শহীদদের স্মরণ করছি, যারা আল আকসায় অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। যারা আহত অবস্থায় আছে, যারা কারাগারে আছে, সবাইকে অভিনন্দন। আজ আমাদের মুক্তির দিন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই ঘরে ফিরতে শুরু করেন বাস্ত্যচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। যদিও অনেকের বাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বিধ্বস্ত বাড়ির ওপরই তাঁবু তৈরি করে সেখানে থাকবেন। নিজেদের চিরচেনা এলাকায় ফিরতে চান তারা। চান প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে আবারও আগের মতো সময় কাটাতে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের পর ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক-বোঝাই মানবিক ত্রাণ গাজা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০০টি ট্রাক উত্তরাঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে এসেছে। নষ্ট করার মতো আর সময় নেই।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয়, ওসিএইচএ বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট পরই ত্রাণবাহী প্রথম ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার একটি ‘জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ’ হবে।

তবে ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর গাজার কোথায় গেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা। আর মিসর থেকে বলা হচ্ছে, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় কেরাম শালোম এবং আল-ওগায় অন্তত ১৯৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও জ্বালানিবাহী পাঁচটি ট্রাক ঢুকেছে। এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন সীমান্তে থাকা ইসরাইলিরাও। তারা বলেন, অনেকদিন ধরেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসুক, এই প্রার্থনাই করি।

অন্যদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামাসের মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। গিডিয়ন সার বলেন, প্রথমত, সব জিম্মিদের মুক্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই কারণেই নতুন পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। একটা নয়, কয়েকটি ধাপে এই কাজ হবে। যুদ্ধের জন্য আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। সেটা অর্জনের জন্যই আপাতত হামাসের ইচ্ছা মেনে নিচ্ছি। হামাস গাজার ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যতেও এ্ই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা আসবে না বলেও মন্তব্য করেন ইসরাইলের এই মন্ত্রী।গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ৯১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১০,৭৫০ জন আহত হয়েছে।

ধ্বংস্তূপের নিচে অনেক মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করে হচ্ছে।জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার ৯২ শতাংশ বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার লাখ ১৬ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস এবং দুই লাখ ৭৬ হাজার বাড়ি ব্যাপকভাবে বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০/০১/২০২৫; সুরমা টিভি ২৪; সুমাইয়া।