নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা ও নেককারদের প্রতিদান: কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি
লেখক: মোঃ শফিকুল ইসলাম
ইসলাম নারী ও পুরুষকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে সমান মর্যাদা ও দায়িত্ব দিয়েছে। এই নীতিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৫-এ:
আরবি:
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অনুবাদ:
“নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, আনুগত্যশীল পুরুষ ও আনুগত্যশীল নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাযতকারী পুরুষ ও লজ্জাস্হান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্বরনকারী নারী—আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।”
(সূরা আল-আহযাব , আয়াত ৩৫)
সমানতালে চলা শ্রেষ্ঠত্বের পথে
এই আয়াতটি ১০টি চারিত্রিক গুণাবলির ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে তাদের নেক আমলের উপর ভিত্তি করে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। এটি ইসলামের ন্যায় ও সাম্যবাদের একটি অমীয় ঘোষণা।
অনুরূপ আয়াতসমূহ যা এই বার্তাকে জোরদার করে:
১. সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩:
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পরহেযগার।…”
২. সূরা আন-নাহল, আয়াত 97:
“যে কেউ সৎকাজ করে, সে পুরুষ হোক বা নারী এবং সে মুমিন হলে, তাকে আমি অবশ্যই একটি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের উত্তম কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দিব।”
বার্তা ও আহ্বান:
আজকের সমাজে নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। অথচ কুরআন ১৪০০ বছর আগেই এই ন্যায় ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। নারীকে কেবল করুণা বা সহানুভূতির দৃষ্টিতে নয়, বরং একজন পূর্ণাঙ্গ, আল্লাহর অনুগত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের কর্তব্য, আমরা যেন এই নির্দেশনাগুলোর আলোকে নিজেদের চরিত্র গঠন করি এবং সমাজে ন্যায় ও মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থানের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করি।
দোয়া:
হে আল্লাহ, আমাদের অন্তরে সঠিক জ্ঞান ও পরহেযগারি দান করুন। নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদার মধ্যে আমাদের কাজ করতে সাহায্য করুন, যেন আমরা তুমিই যেভাবে আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তেমনভাবে নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারি। আমিন।
১ মে ২০২৫ ।