সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:
ফিলিস্তিনি কবি ও লেখক মোসাব আবু তোহা পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন। তাকে মন্তব্য প্রতিবেদন বিভাগে সম্মানজনক এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি নির্বাসনের জন্য ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলো লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন তিনি।
ফিলিস্তিনি কবি ও লেখক মোসাব আবু তোহা।
গত সোমবার (৫ মে) মার্কিন সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে খ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আবু তোহা এই পুরস্কার পেয়েছেন তার লেখা নিবন্ধগুলোর জন্য যা দ্য নিউ ইয়র্কারে প্রকাশিত হয়েছে।
পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আবু তোহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘নিবন্ধের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছি। এটি আশার আলো দেখাক। এটি এক উপাখ্যান হয়ে উঠুক।
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেয়া তার এই কথাগুলো আরেক ফিলিস্তিনি কবি রিফাত আল আরিরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই কবি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হন। তার লেখা সবশেষ কবিতার শিরোনাম ছিল ‘ইফ আই মাস্ট ডাই, লেট ইট বি আ টেল’। অর্থ ‘আমাকে যদি মরতেই হয়, তাহলে তা হোক এক উপাখ্যান’।
ফিলিস্তিনের অধিকাংশ কবির মতো মোসাব আবু তোহাও দখলদার ইসরাইলের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালে তাকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক হন। কিছুদিন পর মুক্তি দেয়া হলেও তাকে মিশরে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
মিশর থেকে পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইসরাইলি নিপীড়নের সেই তিক্ত ও ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো দ্য নিউ ইয়র্কারে লিখতে শুরু করেন। এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, ‘গত এক বছরে আমি আমার স্মৃতির অনেক বাস্তব অংশ হারিয়ে ফেলেছি- মানুষ, স্থান ও এমন অনেক জিনিস যা আমাকে মনে রাখতে সাহায্য করেছিল।
আরও লেখেন, ‘আমি ভালো স্মৃতি তৈরি করতে সংগ্রাম করেছি। গাজায় প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি এক ধরণের অ্যালবামে পরিণত হয়, যা ছবি দিয়ে নয় বরং প্রকৃত মানুষদের দ্বারা ভরা থাকে, মৃতরা তার পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যে চাপা পড়ে থাকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রে আবু তোহার থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইসরাইলের সমালোচনা করে এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তার ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যেই উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো আবু তোহাকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এই কবি। যে কারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। গত ডিসেম্বরে আল জাজিরায় এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
সেখানে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা চললেও এর বাসিন্দাদের জন্য কিছুই করতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করেন এই কবি। বলেন, ‘গাজার মানুষকে সাহায্য করার অক্ষমতার অনুভূতি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
তিনি বলেন,একবার কল্পনা করার চেষ্টা করুন- গাজার একটি স্কুলে পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন আপনি। চারদিকে বোমা হামলা, আপনার পরিবারকে বাঁচাতে আপনি কিছুই করতে পারছেন না। খাবার, ওষুধ এমনকি পানিটুকুও তাদের মুখে তুলে দিতে পারছেন না। তারপর যে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অর্থ জোগাচ্ছে, মদদ দিচ্ছে, আপনি সেখানেই এসে বসে আছেন। এটা তেমনই হৃদয়বিদারক।